এই শুনো --- জানালার সামনে মধুরিমা দাঁড়িয়ে, জানো --- সেই
চেহেরা এই মাত্র সরে গেল, লম্প পোস্টের নিচে হতে, বিস্ফারিত
চোখে এখনো চেয়ে আছে, স্ট্রীটের দিকে, মধুরিমা. স্বামী স্ত্রী দু
জনের সংসার, সদ্য বিবাহিত, অবশ্যই ভাব করে বিয়ে, দুই জন -
ই ইঞ্জিনিয়ার, ভালো মাইনা. তুমি আবার -- কেন বারে বারে
কোনো মানুষ রাত দিন এই ভাবে, মানে কোনো কাজ কর্ম নাই
বুঝি তার যে -- এসে দাঁড়িয়ে থাকবে, জানালা টা দাও দেখি, রাত
হয়েছে, সিগরেটে আগুন ধরিয়ে, প্রথমেশ কথা টি বলল, না -- তুমি
আমার বিশ্বাস কর, তোমাকে ডাক দিতেই সেই মুখ টা সরে গেল,
যেন ও টের পেয়ে গেছে, যে আমি তোমায় ডাকছি, বিছানার
চাদর গুছাতে গুছাতে মধুরিমা বলল, "আশ্চর্য্য তুমি শুধুই দেখো,
আমি ত কোনো দিনেই তাকে দেখি নি যে -- প্রত্যুত্তরে প্রথমেশ জুড়ল".
সিগরেট পায়ে ঘসে, সে পালঙ্কে এত ক্ষণ উঠে এসেছে, মধুরিমা
আইনার সামনে বসে নিজের বিম্ব দেখছে, কি সেই অনাহূতের
বিষয়ে ভাবছে বলা মুশকিল, আতঙ্ক অশান্তির ভাব স্পষ্ট, সুন্দর
মুখ খানি যেন ক্রমে ক্রমে শুকিয়ে চলেছে, কিছু ক্ষণের মধ্যেই নাক
ডাকা আরাম্ভ, এই ক এক দিন থেকে সে লক্ষ্য করছে যে প্রথমেশ
বিছানায় পড়তেই না পড়তে গভীর ঘুমে, হয় ত কাজের চাপ বেশি,
আলোটা নিভিয়ে সে ও ঘুমোবার চেষ্টায় গড়িয়ে পড়ল.
তার চোখে কিন্তু ঘুম নেই, নানান আশংকা যেন পাক খেলে চলেছে,
সেই অপরিচিত চাহনি যেন অহর্নিশ অনুসরণ করে চলেছে, সে পাশ
ফিরে এক বার স্বামীর মুখের দিকে চাইল, কে -- কে -- কেন -- সেই
মুখ তাকে এই ভাবে মানসিক যন্ত্রণাই ফেলে চলেছে, কিসের জন্য ?
সে ত কারোর কোনো ক্ষতি করে নি, ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে
পড়েছে,
আজ রবিবার, তাই তাড়ার কিছুই নাই, দু জনেই অনেক ক্ষণ বেশ
ঘুমিয়েছে, প্রথমেশ খবর কাগজে নজর রেখে বলল - মনে আছে ত
মধু আজকের প্রোগ্রামের ফর্দ, য়া -- তোমার মনে আছে ওই অরুণ
বাগচী, ইন্সুরেন্সের এজেন্ট, জানো -- সেই কাল ফোন করে ছিল, সে
বলল তোমার সাইনের দরকার, বিয়ের কাগজ গুলো যেন সঙ্গে নিতে
ভুল না, নমিনি অমিনি কিসে যেন দরকার, চায়ে চুমুক দিয়ে, আবার
সে খবরের দুনিয়ায় তল্লীন, " জানো শরীর টা কেমন যেন মচ মচ
করছে, কি জানি, আবার জ্বর থর ধরবে না কি " মধুরিমা চা নিয়ে
বসলো, এই শুনো ফেরার পথে একটু ওই বাড়ি হয়ে আসবো, কেমন,
কত দিন হলো মা কে দেখি নি, মন ছট ফট করে - -
তুমি ও না, রোজ সকাল সন্ধ্যা ত ফোন করেই চলেছ, তা সত্তেও ---
ও. কে -- প্রথমেশ যেন আন্দোলনের পূর্বে সন্ধির পথে, কথা মিছে মিছে
বাড়িয়ে লাভ, রবিবার টা ওদের ব্যস্ত ভাবেই কাটল, সাত টা নাগাদ
তারা নিজের এপার্টমেন্টে ঢুকলো,
ঘরে ঢুকেই জানালা গুলো খোলা মধুরিমার সহজ অভ্যাস, জানালা
খুলেই -- দেখে, সেই মানুষ, ঠিক গেটের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল.
প্রথমেশ কে ডাক দিতে না দিতেই সে বলল, আবার সেই লোকটা কে
দেখেছ মনে হয়, কাপড় গুলো খুলতে খুলতে সে বলে চলেছে.
মধুরিমার মাথা গরম, সব সময় তোমার ইয়ার্কি ভালো লাগে না --
কত দিন থেকে আমি সমানে সেই লোকের যন্ত্রনায় ভুগছি আর তুমি
তাকে ঠাট্টা ভাবছ -- প্রথম -- তুমি বরং কাল থানায় এক ডাইরি করে
এস, আমার না ক এক দিন থেকে খুব ভয় ভয় মনে হয় -- বাথরুমেও
ঢুকতে যেন আত্কিয়ে উঠি, কি জানে - যদি আগে থেকে ঘরে ঢুকে
থাকে, ঠিক আছে পরে দেখব -- আবোল তাবোল যত সব ভাবতে যেও
না, মোজা গুলো খুলতে খুলতে বলল, ভয়ের কিছু নাই -- just take
easy পাজামা পরে সে অলিন্দমুখী দরজা খুলে সিগরেটটি ধরালো.
দিন দিন সেই অপরিচিত চাহনির আতঙ্কে মধুরিমার মুখশ্রীর আলো
ম্লান করে গেছে , কিন্তু আশ্চর্য্য যে সেই চেহেরা টা শুধুই মধুরিমাই
দেখত পায় , সবাই বলে যেত এটা কিছু নয় মনের ভ্রান্তি, ক্রমশঃ
মধুরিমার মানসিক অবস্থা শোচনীয় হয় উঠলো, তাই প্রথমেশ তাকে
নামকরা মনোচিকিত্সকের কাছে নিয়ে যাওয়ার দিন ও সময় ঠিক
করলো, সে দিন ছিল রবিবার, সাধারণতঃ রবিবারে শহেরে ক্লিনিক
গুলো বন্দ থাকে, any way মধুরিমা সিঁড়ি ভেঙ্গে পয়লা তলার রুম
নম্বর ১১১ সামনে থামল, প্রথমেশ বলল, তুমি একটু বস, সে বন্দ
চেম্বারের দরজা খুলে দেখল, ফিরে এসে বলল ডক্টর একাই আছে এস,
ভয় পাওয়ার কিছু নাই, আমি আছি তোমার সঙ্গে, যেমন মধুরিমা
রুমে পা দিল, সে চিত্কার করে সিঁড়ির দিকে দৌড়িয়ে গেল - - -
তার পিছনে পিছনে ছিল প্রথমেশ - - "আমি জানতাম সে আমার
পিছনে ছায়ার মত লেগে থাকবে - - সে কোনো ডক্টর নয় বরং সেই
ছায়া ঘিরা মানুষ - - "বলতে বলতেই মধিরিমা গড়িয়ে সিঁড়ির অন্তে
মূর্ছিত হয়ে গেল, আর কোনো দিনই চোখ খুলে নি তার।
প্রথমেশ এখনো ওই ভাবেই অলিন্দে দাঁড়িয়ে সিগরেট টানে, আর
শুন্যে ধুম্র বলয় ছাড়ে, মাঝে - মাঝে এক অচেনা মেয়ে তার খুব কাছে
দাঁড়িয়ে মধ্য রাতে কামুক উচ্চ হাসিতে হেসে যায়, আর চার দিকে
রহস্যময় নিরবতা ছড়িয়ে রয়।
- শান্তনু সান্যাল
চেহেরা এই মাত্র সরে গেল, লম্প পোস্টের নিচে হতে, বিস্ফারিত
চোখে এখনো চেয়ে আছে, স্ট্রীটের দিকে, মধুরিমা. স্বামী স্ত্রী দু
জনের সংসার, সদ্য বিবাহিত, অবশ্যই ভাব করে বিয়ে, দুই জন -
ই ইঞ্জিনিয়ার, ভালো মাইনা. তুমি আবার -- কেন বারে বারে
কোনো মানুষ রাত দিন এই ভাবে, মানে কোনো কাজ কর্ম নাই
বুঝি তার যে -- এসে দাঁড়িয়ে থাকবে, জানালা টা দাও দেখি, রাত
হয়েছে, সিগরেটে আগুন ধরিয়ে, প্রথমেশ কথা টি বলল, না -- তুমি
আমার বিশ্বাস কর, তোমাকে ডাক দিতেই সেই মুখ টা সরে গেল,
যেন ও টের পেয়ে গেছে, যে আমি তোমায় ডাকছি, বিছানার
চাদর গুছাতে গুছাতে মধুরিমা বলল, "আশ্চর্য্য তুমি শুধুই দেখো,
আমি ত কোনো দিনেই তাকে দেখি নি যে -- প্রত্যুত্তরে প্রথমেশ জুড়ল".
সিগরেট পায়ে ঘসে, সে পালঙ্কে এত ক্ষণ উঠে এসেছে, মধুরিমা
আইনার সামনে বসে নিজের বিম্ব দেখছে, কি সেই অনাহূতের
বিষয়ে ভাবছে বলা মুশকিল, আতঙ্ক অশান্তির ভাব স্পষ্ট, সুন্দর
মুখ খানি যেন ক্রমে ক্রমে শুকিয়ে চলেছে, কিছু ক্ষণের মধ্যেই নাক
ডাকা আরাম্ভ, এই ক এক দিন থেকে সে লক্ষ্য করছে যে প্রথমেশ
বিছানায় পড়তেই না পড়তে গভীর ঘুমে, হয় ত কাজের চাপ বেশি,
আলোটা নিভিয়ে সে ও ঘুমোবার চেষ্টায় গড়িয়ে পড়ল.
তার চোখে কিন্তু ঘুম নেই, নানান আশংকা যেন পাক খেলে চলেছে,
সেই অপরিচিত চাহনি যেন অহর্নিশ অনুসরণ করে চলেছে, সে পাশ
ফিরে এক বার স্বামীর মুখের দিকে চাইল, কে -- কে -- কেন -- সেই
মুখ তাকে এই ভাবে মানসিক যন্ত্রণাই ফেলে চলেছে, কিসের জন্য ?
সে ত কারোর কোনো ক্ষতি করে নি, ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে
পড়েছে,
আজ রবিবার, তাই তাড়ার কিছুই নাই, দু জনেই অনেক ক্ষণ বেশ
ঘুমিয়েছে, প্রথমেশ খবর কাগজে নজর রেখে বলল - মনে আছে ত
মধু আজকের প্রোগ্রামের ফর্দ, য়া -- তোমার মনে আছে ওই অরুণ
বাগচী, ইন্সুরেন্সের এজেন্ট, জানো -- সেই কাল ফোন করে ছিল, সে
বলল তোমার সাইনের দরকার, বিয়ের কাগজ গুলো যেন সঙ্গে নিতে
ভুল না, নমিনি অমিনি কিসে যেন দরকার, চায়ে চুমুক দিয়ে, আবার
সে খবরের দুনিয়ায় তল্লীন, " জানো শরীর টা কেমন যেন মচ মচ
করছে, কি জানি, আবার জ্বর থর ধরবে না কি " মধুরিমা চা নিয়ে
বসলো, এই শুনো ফেরার পথে একটু ওই বাড়ি হয়ে আসবো, কেমন,
কত দিন হলো মা কে দেখি নি, মন ছট ফট করে - -
তুমি ও না, রোজ সকাল সন্ধ্যা ত ফোন করেই চলেছ, তা সত্তেও ---
ও. কে -- প্রথমেশ যেন আন্দোলনের পূর্বে সন্ধির পথে, কথা মিছে মিছে
বাড়িয়ে লাভ, রবিবার টা ওদের ব্যস্ত ভাবেই কাটল, সাত টা নাগাদ
তারা নিজের এপার্টমেন্টে ঢুকলো,
ঘরে ঢুকেই জানালা গুলো খোলা মধুরিমার সহজ অভ্যাস, জানালা
খুলেই -- দেখে, সেই মানুষ, ঠিক গেটের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল.
প্রথমেশ কে ডাক দিতে না দিতেই সে বলল, আবার সেই লোকটা কে
দেখেছ মনে হয়, কাপড় গুলো খুলতে খুলতে সে বলে চলেছে.
মধুরিমার মাথা গরম, সব সময় তোমার ইয়ার্কি ভালো লাগে না --
কত দিন থেকে আমি সমানে সেই লোকের যন্ত্রনায় ভুগছি আর তুমি
তাকে ঠাট্টা ভাবছ -- প্রথম -- তুমি বরং কাল থানায় এক ডাইরি করে
এস, আমার না ক এক দিন থেকে খুব ভয় ভয় মনে হয় -- বাথরুমেও
ঢুকতে যেন আত্কিয়ে উঠি, কি জানে - যদি আগে থেকে ঘরে ঢুকে
থাকে, ঠিক আছে পরে দেখব -- আবোল তাবোল যত সব ভাবতে যেও
না, মোজা গুলো খুলতে খুলতে বলল, ভয়ের কিছু নাই -- just take
easy পাজামা পরে সে অলিন্দমুখী দরজা খুলে সিগরেটটি ধরালো.
দিন দিন সেই অপরিচিত চাহনির আতঙ্কে মধুরিমার মুখশ্রীর আলো
ম্লান করে গেছে , কিন্তু আশ্চর্য্য যে সেই চেহেরা টা শুধুই মধুরিমাই
দেখত পায় , সবাই বলে যেত এটা কিছু নয় মনের ভ্রান্তি, ক্রমশঃ
মধুরিমার মানসিক অবস্থা শোচনীয় হয় উঠলো, তাই প্রথমেশ তাকে
নামকরা মনোচিকিত্সকের কাছে নিয়ে যাওয়ার দিন ও সময় ঠিক
করলো, সে দিন ছিল রবিবার, সাধারণতঃ রবিবারে শহেরে ক্লিনিক
গুলো বন্দ থাকে, any way মধুরিমা সিঁড়ি ভেঙ্গে পয়লা তলার রুম
নম্বর ১১১ সামনে থামল, প্রথমেশ বলল, তুমি একটু বস, সে বন্দ
চেম্বারের দরজা খুলে দেখল, ফিরে এসে বলল ডক্টর একাই আছে এস,
ভয় পাওয়ার কিছু নাই, আমি আছি তোমার সঙ্গে, যেমন মধুরিমা
রুমে পা দিল, সে চিত্কার করে সিঁড়ির দিকে দৌড়িয়ে গেল - - -
তার পিছনে পিছনে ছিল প্রথমেশ - - "আমি জানতাম সে আমার
পিছনে ছায়ার মত লেগে থাকবে - - সে কোনো ডক্টর নয় বরং সেই
ছায়া ঘিরা মানুষ - - "বলতে বলতেই মধিরিমা গড়িয়ে সিঁড়ির অন্তে
মূর্ছিত হয়ে গেল, আর কোনো দিনই চোখ খুলে নি তার।
প্রথমেশ এখনো ওই ভাবেই অলিন্দে দাঁড়িয়ে সিগরেট টানে, আর
শুন্যে ধুম্র বলয় ছাড়ে, মাঝে - মাঝে এক অচেনা মেয়ে তার খুব কাছে
দাঁড়িয়ে মধ্য রাতে কামুক উচ্চ হাসিতে হেসে যায়, আর চার দিকে
রহস্যময় নিরবতা ছড়িয়ে রয়।
- শান্তনু সান্যাল